এই মামলাটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩৬(১) এর সারণি ১৯(খ) এর অধীনে মাদক (গাঁজা) ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ:

২০২২ সালের ১৯শে অক্টোবর, র‍্যাব-১৪ ময়মনসিংহের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানার শ্যামগঞ্জ বাজারের বড় মসজিদের সামনে কতিপয় ব্যক্তি মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করছে। র‍্যাবের দলটি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ইউনিফর্ম দেখে দুইজন ব্যক্তি পালানোর চেষ্টা করে। ধৃত ব্যক্তিরা হলো মোঃ সোহাগ এবং মোঃ মেহেদী হাসান বাবু।

উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়। মোঃ সোহাগের কাছে একটি কম্বলের মধ্যে ৬ কেজি ৮৫০ গ্রাম গাঁজা এবং ০৯টি পাতলা কম্বল পাওয়া যায়। একইভাবে মোঃ মেহেদী হাসান বাবুর কাছেও ৬ কেজি ৮৫০ গ্রাম গাঁজা এবং ০৯টি পাতলা কম্বল উদ্ধার করা হয়।

ঘটনাস্থলেই জব্দ তালিকা তৈরি করা হয় এবং সাক্ষীরা তাতে স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়।

আইনগত প্রক্রিয়া:

তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। তবে, অভিযোগ গঠনের সময় আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের অভিযোগ পড়ে শোনানো সম্ভব হয়নি। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের পরীক্ষা এবং আসামিপক্ষের বক্তব্য উপস্থাপন করা যায়নি।

বিচার্য বিষয়:

আদালতে মূলত দুইটি বিষয় বিচার্য ছিল:

১. আসামিরা উল্লেখিত স্থানে ও সময়ে ১৩.৭ কেজি গাঁজাসহ হাতেনাতে ধরা পড়েছিল কিনা? ২. রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের উল্লিখিত ধারায় অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে কিনা?

সাক্ষ্যপ্রমাণ:

রাষ্ট্রপক্ষে দুইজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন মামলার বাদী, পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মনসুর আহমেদ এবং অভিযানের একজন সদস্য জয়দেব দাশ। উভয় সাক্ষীই তাদের জবানবন্দিতে এজাহারের বক্তব্য সমর্থন করেন এবং আসামিদের গ্রেফতার ও তাদের কাছ থেকে গাঁজা উদ্ধারের ঘটনার বর্ণনা দেন। রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্টে উদ্ধারকৃত আলামত গাঁজা হিসেবে শনাক্ত হয়।

আলোচনা ও সিদ্ধান্ত:

আদালত রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য এবং অন্যান্য প্রমাণ বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে আসামিরা অবৈধভাবে গাঁজা নিজেদের হেফাজতে রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের উল্লিখিত ধারা লঙ্ঘন করেছে। আসামিদের হেফাজত থেকে উদ্ধারকৃত গাঁজার পরিমাণ এবং রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে।

আদালত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) এর সারণি ১৯(খ) অনুযায়ী আসামিদের শাস্তিযোগ্য অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেন। তবে, মামলার নিষ্পত্তির সময়কাল, আসামিদের বয়স এবং অপরাধের ধরণ বিবেচনা করে আদালত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান না করে লঘু দণ্ড প্রদান করা যুক্তিযুক্ত মনে করেন।

রায়:

আদালত মোঃ সোহাগ এবং মোঃ মেহেদী হাসান বাবু প্রত্যেককে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩৬(১) এর সারণি ১৯(খ) অনুযায়ী পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করেন। জরিমানা অনাদায়ে তাদের আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।