একটি হত্যা মামলা। প্রসিকিউশন পক্ষের অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালের ২ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নওগাঁ জেলার মান্দা থানার ভরাটশিবনগর গ্রামে অভিযুক্ত ২৬ জন এবং আরও ১০-১৫ জন ব্যক্তি মসজিদের জমিতে চাষাবাদ শুরু করে। খবর পেয়ে অভিযোগকারীর বাবা আজিম উদ্দিনসহ কয়েকজন সেখানে গেলে, পানাউল্লার বাড়ির পূর্বে আখখেত ও বাঁশঝাড় থেকে আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠি, ফালা, লোহার রড, কোঁচ, দা ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে মনসুরের হুকুমে আজিম উদ্দিনের মাথায় শাহজাহান ফালা দিয়ে আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। অন্যান্য আসামিরা লাঠি দিয়ে আঘাত করলে আজিম উদ্দিন মাটিতে পড়ে যান। এরপর কয়েকজন আসামি তার বুকে উঠে খোঁচাখুঁচি করলে তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়। আসামিরা একই সময়ে ইয়াসিন আলীর মাথায় ও শরীরে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। সাক্ষীরা চিৎকার করলে গ্রামের লোকজন ছুটে এলে আসামিরা লোহার রড, সুলপি ও বাঁশের লাঠি ফেলে পালিয়ে যায়। আহতদের মান্দা প্রসাদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে নেওয়ার পথে কেশরহাটে আজিম উদ্দিন মারা যান। এরপর অভিযোগকারী এই মামলা দায়ের করেন।

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ১৯৯৮ সালের ২ ডিসেম্বর বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে অভিযোগ গ্রহণ করে মামলা নথিভুক্ত করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মানচিত্র তৈরি করেন এবং সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তদন্তে আসামিদের সম্পৃক্ততা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আমলী আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে মামলাটি দায়রা জজ আদালতে পাঠান।

দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে ৩০২, ১৪৯ ও ১১৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন। প্রসিকিউশন ১২ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে। আসামিপক্ষ তাদের জেরা করে। আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সাফাই সাক্ষী দেবে না বলে জানায়।

যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আসামিদের খালাস চান।

আলোচনা শেষে আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, আসামিদের হামলায় আজিম উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে এবং রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।

আদালত মনছুর আলীসহ ২৬ জন আসামিকে ৩০২/১৪৯/১১৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ২০,০০০ টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। মামলা চলাকালে ৮ জন আসামি মারা যাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।